নিঃসন্দেহে এসইও যে কোন ওয়েবসাইটের জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ন।ভালোভাবে এসইও করলে আপনি এর রিটার্নও খুব ভালো পাবেন। অন্যদিকে, এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করলে লাভ তো কিছু হবেই না, বরং আরও নানাবিধ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। অনেকেই না জেনে এসইও এর এসব ভুলগুলো করে থাকে এবং যার জন্য ওয়েবসাইট ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আচ্ছা আপনিও এই ধরনের ভূল করছেন না তো? আপনাকে সাবধান করার জন্যই এই পোস্ট টি। আমি আপনাদের জন্য এমন ৭ টি কমন মিসটেক খুজে বের করেছি যেগুলো অনেকেই করে থাকে।
পড়ে ফেলুন এই আর্টিকেলটি এবং মিলিয়ে দেখুন আপনিও একই ভুল করছেন না তো? তাহলে আর দেরী কিসের? চলুন প্রথম পয়েন্টে চলে যাওয়া যাক।
মিসটেক নং ১- ভূল কিওয়ার্ড বাছাই করা
এসইও এর সবথেকে কমন ও মারাত্মক যে ভুলটি সবাই করে থাকে তা হল ভুল কিওয়ার্ড বাছাই করা। আপনার কিওয়ার্ড সিলেকশনে যদি ভূল হয়ে থাকে তাহলে আপনি অন্য সবকিছু যত ভালো ভাবেই করুন না কেন, গ্রো করাটা আপনার জন্য খুবই মুশকিল হয়ে যাবে।
কিওয়ার্ড রিসার্চ হচ্ছে এসইও এর ক্ষেত্রে পিলারের মত। এখানেই যদি গন্ডগোল হয়ে থাকে, তাহলে সম্পুর্ন স্থাপনাই নড়বড়ে হয়ে যাবে। তো এর থেকে বাঁচার উপায়? কিওয়ার্ড সিলেকশনে খুবই সতর্ক হতে হবে। কোন কিওয়ার্ড এর শুধু সার্চ ভলিউম দেখেই নিয়ে নেওয়া যাবে না। আনুসঙ্গিক আরও কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।যেমন ধরুন, আপনার সার্ভিস বা প্রোডাক্ট কে খুজে পেতে আদৌ কি অডিয়েন্স ঐ কিওয়ার্ড ব্যবহার করবে?শুধুমাত্র কিওয়ার্ড এর শাব্দিক অর্থের উপর গুরুত্ব না দিয়ে সার্চ ইন্টেন্ট এর উপরও গুরুত্ব দিতে হবে।কিওয়ার্ড রিসার্চে তাড়াহুড়া একদমই করতে যাবেন না। Google Keyword Planner, Ahref, SEMrush, Moz, Keyword Revealer এসব টুলের সহায়তা নিতে পারেন। যদি ফ্রি টুলস দিয়ে কাজ সারতে চান Ubbersuggest ব্যবহার করতে পারেন। আর একটি কথা, কোন টুলস দিয়ে কিওয়ার্ড ডিফিকাল্টি চেক করে সেটাকেই অন্ধভাবে বিস্বাস করে ফেলবেন না। নিজেও একটু সময় খরচা করে ম্যানুয়ালী চেক করে দেখবেন। চাইলে কিওয়ার্ড রিসার্চ সার্ভিস নিতে পারেন।
মিসটেক নং ২- কিওয়ার্ড স্টাফিং করা
কিওয়ার্ড স্টাফিং হচ্ছে বাক্যের মধ্যে জোরপূর্বক বার বার কিওয়ার্ড বসানো। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে অনেকেই কন্টেন্ট কে এসইও ফ্রেন্ডলি করা বলতে কিওয়ার্ড স্টাফিং করাকেই বুঝে থাকেন। আপনিও যদি এটা ভেবে থাকেন যে, কিওয়ার্ড কে বারবার কন্টেন্ট এর মধ্যে ব্যবহার করায় সার্চ ইঞ্জিনের জন্য এটা সুবিধাজনক হবে তাহলে আপনি একদমই ভূলের মধ্যে আছেন।
এই ২০২০ সালে এসে কিওয়ার্ড স্টাফিং যে আপনাকে কোন উপকার করতে পারবে না এই ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন। আর এটিও নিশ্চিত থাকুন, কিওয়ার্ড স্টাফিং আপনার কন্টেন্ট কে এসইও ফ্রেণ্ডলি তো করবেই না বরং এসইও কে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। একে তো বার বার জোর করে বাক্যের মধ্যে কিওয়ার্ড বসালে ব্যাপারটি রিডারসদের খুবই বিরক্ত করবে। যার জন্য অনেকেই বিরক্ত হয়ে চলে যাবে। এতে করে সাইটের বাউন্স রেট বেড়ে যাবে ও ডুয়েল টাইম কমে যাবে। অন্যদিকে, সার্চ ইঞ্জিন গুলোও স্টাফিং এর ব্যাপারটিকে স্প্যাম হিসাবে দেখে। যার জন্য আপনি পড়বেন সব দিক থেকেই বিপদে। আপনিও যদি এই ভুলটি করে থাকেন এখনি বাদ দিন।কিওয়ার্ড স্টাফিং করার পরিবর্তে এল,এস,আই ব্যবহার করতে পারেন। তবে, অবশ্যই সেটা হতে হবে ন্যাচারাল। জোর করে কোনকিছু করার চেষ্টা করবেন না।
মিসটেক নং ৩- ঠিকভাবে ইন্টারনাল লিঙ্কিং না করা
ইন্টারনাল লিঙ্কিং এসইও এর খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। বিশেষ করে অন পেজ এসইও এর ক্ষেত্রে। ইন্টার্নাল লিঙ্কিং ঠিকঠাক ভাবে না করতে পারলে আপনার অন পেজ এসইও অসম্পূর্নই থেকে যায়। কিন্তু অনেকেই এই ব্যাপারটি নিয়ে উদাসীন।
ইন্টারনাল লিঙ্কিং এর ক্ষেত্রে মূলত দুই ধরনের ভূল করতে দেখা যায়। এক হল, যেখানে দরকার সেখানে লিঙ্ক বিল্ডিং না করা। অন্যটি, অপ্রাসঙ্গিক যায়গাতে ইন্টারনাল লিঙ্কিং করে রাখা।দুটোই আপনার সাইটের জন্য সমান ভাবে ক্ষতিকারক। তাই, শুধু মন চাইলেই ইন্টারনাল লিঙ্কিং করা যাবে না। বিশেষ করে দুটি বিষয় এখানে খেয়াল রাখতে হবে। প্রথমত, আপনি যেখানে লিঙ্কিং করছেন অ্যাংকর টেক্সট কতখানি প্রাসঙ্গিক? দ্বিতীয়ত, এটি কি রিডারদের জন্য সুবিধাজনক হবে কিনা।
যদি এতে করে আপনার কন্টেন্ট টি রিডারদের জন্য আরও সুবিধাজনক হয় তাহলেই কেবল সেখানে ইন্টারনাল লিঙ্কিং করবেন। অন্যথায়, জোরপূর্বক লিঙ্ক বসিয়ে রিডার্স ও সার্চ ইঞ্জিন কে বিরক্ত করবেন না।
মিসটেক নং ৪- কোয়ালিটি লিঙ্কের উপর গুরুত্ব না দেওয়া
একটি ভ্রান্ত ধারনা আমাদের মধ্যে অনেকেরই রয়েছে। সেটি হল কোয়ালিটি লিঙ্কের উপর গুরুত্ব না দিয়ে কোয়ান্টিটির উপর গুরুত্ব দেওয়া। কিন্তু এটি যে কত বড় ক্ষতির কারন হয়ে দাড়ায় পরবর্তীতে এ ব্যাপারটি অনেকেরই অজানা।
আপনার সাইটের টোটাল কতগুলো ব্যাকলিঙ্ক রয়েছে এর থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে ব্যাকলিঙ্ক গুলো কেমন কোয়ালিটি সম্পন্ন সাইট থেকে এসেছে। তো এজন্যই অপ্রাসঙ্গিক ও লো কোয়ালিটি সাইটে ঝুড়ি ঝুড়ি ব্যাকলিঙ্ক করার থেকে প্রাসঙ্গিক ও হাই কোয়ালিটি সাইটের অল্প কিছু লিঙ্ক আপনাকে বেশী সাহায্য করবে। এক্ষেত্রে আরও একটি ভূল অনেকেই করে থাকে। সেটি হল, ঠিকমত অ্যাংকর টেক্সট না বসানো। এলোমেলো অ্যাংকর টেক্সট, অপ্রাসঙ্গিক সাইট থেকে ব্যাকলিংক, লো কোয়ালিটি ব্যাকলিঙ্ক, এগুলো সবগুলোই আপনার সাইটের জন্য ভয়ানক।
একটা সময় ছিল যখন ঝুড়ি ঝুড়ি ব্যাকলিঙ্ক র্যাংকিং এ ভালো প্রভাব ফেলতো। কিন্তু সেই মানদাতার আমল এখন আর নেই। তাই আপনাকেও এসব ভ্রান্ত ধারনা থেকে বাইরে বেড়িয়ে আসতে হবে। আপনার সাইটে ১০ টা লিঙ্ক থাকলেও তা যেন থাকে কোয়ালিটি লিঙ্ক। মনে রাখবেন, দুষ্টু গরুর থেকে শুন্য গোয়াল অনেক ভালো।
মিসটেক নং ৫- ঠিকভাবে টাইটেল ট্যাগ ও মেটা ডিসক্রিপশন না দেওয়া
টাইটেল ট্যাগের মত গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়ে অনেকেই ভূল করে থাকেন। সার্চইঞ্জিন এর বটের কাছে টাইটেল ট্যাগ ও মেটা খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয় কোন ওয়েব পেজকে ক্রল করার সময়। কিন্তু আপনি যদি টাইটেল ট্যাগ এবং মেটা ঠিকভাবে না বসিয়ে থাকেন তাহলে বিশাল ভূলের মধ্যে রয়েছেন। যা সার্চ বটকে আপনার কন্টেন্ট সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিবে না।
আরও একটি কমন ভূল আমি অনেক লোকদেরই করতে দেখেছি আর সেটি হল ইমেজ ট্যাগগুলো ব্যবহার না করা। কিন্তু সার্চ বটের কাছে ইমেজ ট্যাগগুলিও খুবই গুরুত্বপূর্ন। ঠিকমত ইমেজ ট্যাগ, টাইটেল ট্যাগ ও মেটা ব্যবহার করলে আপনার কন্টেন্টটি আসলে কি বোঝাচ্ছে বা কাদের এটি জন্য উপকারী হবে সার্চ বট এটি সহজেই বুঝতে পারবে। এতে করে আপনার সাইটের র্যাংকিং এ ভালো প্রভাব পড়বে। আর টাইটেল ট্যাগ গুলি বুঝে শুনে বসাবেন। শুধু টাইটেলে কিওয়ার্ড থাকলেই টাইটেল ট্যাগ বসিয়ে দিবেন না। বুঝে শুনে যেখানে দরকার শুধু সেখানেই ব্যবহার করবেন।
মিসটেক নং ৬- সাইটকে মোবাইল ফ্রেন্ডলি করার দিকে মনোনিবেশ না করা
আপনার ওয়েবসাইটকে ভালোভাবে এসইও করার পরও কি আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন না? তাহলে, হয়তো আপনিও এই একই ভূল করেছেন। মনে রাখতে হবে সাইটের বেশির ভাগ অডিয়েন্সই আসে মোবাইল থেকে। ধীরে ধীরে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। তাই আপনি যদি আপনার সাইটকে এখনো মোবাইল ফ্রেন্ডলি না করে থাকেন তাহলে সার্চ রেজাল্টে এর প্রভাব পড়বে।
জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগোলসহ প্রত্যেক সার্চ ইঞ্জিনই বলে সাইটকে মোবাইল ফ্রেন্ডলি করার জন্য। গুগোল তো এরই মধ্যে এটা নিয়েই একটি আপডেটও প্রকাশ করেছে। তাই, আপনার সাইট সার্চ ইঞ্জিনের টপ রেজাল্টে নিয়ে আসার জন্য অবশ্যই একে মোবাইল ফ্রেন্ডলি হতে হবে এবং একই সাথে সাইটের লোডিং স্পিডও ভালো হতে হবে। নতুবা, আপনার অন্য কোন টেকনিক কাজে আসবে না।
মিসটেক নং ৭- শুধুমাত্র বেশী ভিজিটর পাবার টার্গেট করা
হ্যা, ঠিকই পড়েছেন। অনেকেই এসইও করার উদ্দেশ্য শুধু বেশী ভিজিটর আনতে পারাকেই মনে করে থাকেন। কিন্তু, এটি একটি ভ্রান্ত ধারনা। সাইটে ভিজিটর আসার দরকার তো অবশ্যই দরকার আছে। কিন্তু তার মানে এই না যে এটিই এসইও এর একমাত্র লক্ষ্য শুধু ভিজিটর বাড়ানো। বরং একই সাথে আপনাকে এটিও মাথায় রাখতে হবে যে কত পার্সেন্ট ভিজিটর কনভার্শন হচ্ছে।
আপনি যদি কোন পন্য বিক্রি করে থাকেন, আপনার সাইটে আসা কত পার্সেন্ট ভিজিটর আপনার পন্যটি কিনছে? আপনি যদি কোন সার্ভিস প্রদান করে থাকেন কত পার্সেন্ট ভিজিটর আপনার থেকে সার্ভিস নিচ্ছে? ধরুন, আপনার ওয়েবসাইটে ১০০ জন ভিজিটর আসে প্রতি মাসে কিন্তু সেখান থেকে আপনার কাস্টমারে পরিনত হয় ২ জন। অন্যদিকে, আপনার বন্ধুর সাইটে প্রতি মাসে ৫০ জন ভিজিটর আসে যার মধ্যে ৫ জনই কাস্টমারে পরিনত হয়। এখানে কে বেশী লাভবান হবে?অবশ্যই, আপনার বন্ধু। তো শুধু সাইটে ভিজিটরের কথা চিন্তা করে ইরিলিভেন্ট কিওয়ার্ড এ রেঙ্ক করলেই হবে না, তাদের থেকে কেমন কনভার্শন হচ্ছে সেটিও ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাপারগুলি ট্র্যাক করতে Google Analytics, Google Search Console ছাড়াও আরও অনেক পেইড টুলস আপনাকে সহায়তা করতে পারে।
আমরা একদম শেষভাগে চলে এসেছি। তো এই ছিল আজকের বিষয় এসইও এর কমন ৭ টি মিসটেক সম্পর্কে। আশা করি, এখন থেকে আপনি এই ভূলগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন এবং সঠিক পদ্ধতিতে এসইও করে এর সম্পূর্ন সুবিধা নিবেন।
এই ধরনের আরও গুরুত্বপূর্ন এবং উপকারী বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে ক্রিয়েটিভ মার্কেটার্স বাংলাদেশ এর সাথেই থাকুন। এসইও এর ব্যাপারে আরও যদি কিছু জানার থাকে বা আমাদের থেকে এসইও সার্ভিস নিতে চান তাহলে যোগাযোগ করুন।