আমাদের দেশে এসইও সার্ভিস নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি কমন রিকোয়ারমেন্ট দেখা যায়। বেশীর ভাগ লোকেরই কেমন এসইও সার্ভিস লাগবে এই প্রশ্নের উত্তরে জবাব হয়, “একটু কমের মধ্যে বা চীপ প্রাইসে” ।সবার কথাই বলছিনা, তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এমনটি হয়।
আচ্ছা, আপনিও কি কোন ওয়েবসাইটের সাথে জড়িত? আপনিও কি এসইও সার্ভিস খুজছেন? আপনি চীপ কিংবা কোস্ট যেমন এসইও সার্ভিসই খুজে থাকুন না কেন এই আর্টিকেলটি আপনার পড়ে দেখা উচিত। কিন্তু কেন? এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কেন চীপ এসইও হার্ট করে। তাই, এপনিও যদি ভূল গুলো করে থাকেন এগুলো থেকে দূরে থাকতে পারবেন।
তো আর দেরী না করে চলুন শুরু করা যাক।
শুরুতেই এসইও টা কি একটু সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।
আপনার যদি একটি ওয়েবসাইট থেকে থাকে আপনি হয়তো শব্দটির সাথে পরিচিত। এর পূর্নরুপ হচ্ছে ‘সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন”। সহজভাবে বলতে গেলে এসইও হচ্ছে সেই সকল অপ্টিমাইজেশন টেকনিক যা কোন ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের টপ রেজাল্টে নিয়ে আসে। এর জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সকল কলাকৌশল। বাংলাদেশ সহ অন্যান্য সকল দেশগুলিতে এখন এসইও সার্ভিস বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
তাহলে চীপ এসইও কি?
চীপ এসইও হচ্ছে কম টাকার মধ্যে এসইও সার্ভিস নেওয়া। যদিও আমরা সকলেই প্রায় এই কথাটার সাথে পরিচিত যে, “জিনিস যেটা ভালো, দাম তার একটু বেশী” । কিন্তু তারপরও আমরা অনেকেই চীপ এসইও সার্ভিস খুজে থাকি। এতে করে কি আসলেই আমরা টাকা সেভ করতে পারি? নাকি এটার জন্য আমাদের অন্যদিক থেকে বড় কোন মূল্য দিতে হয়?
চীপ এসইও কেন হার্ট করে?
-
লিঙ্ক বিল্ডিং হবে কিন্তু র্যাঙ্কিং পাবেন না
চীপ এসইও সার্ভিসের অন্যতম বড় যেই সমস্যা সেটি হল, আপনার সাইটের জন্য লিঙ্ক বিল্ডিং হয়তো হবে কিন্তু এতে করে আপনার সাইট র্যাংকে আসবে না। ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে আপনি হয়তো মাঝে মধ্যেই পোস্ট দেখতে পাবেন যে, কেউ অনেক কম খরচে বিভিন্ন ধরনের ১০০/২০০/৩০০ লিঙ্ক বিল্ডিং করে দিতে চাচ্ছে। এতে করে কিন্তু র্যাঙ্কিং হবে কিনা বা এতে করে লাভের লাভ কোন কিছু হবে কিনা এটা প্রশ্ন করলে কোন উত্তর দিতে পারবে না।
এসইও সার্ভিস নিয়ে আপনি কি চান? অবশ্যই আপনার ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের টপ রেজাল্টে নিয়ে এসে আরও বেশি ভিজিটর পেতে চান এবং তাদের কাছে আপনার পন্য বা সেবা বিক্রি করতে চান।
কিন্তু আপনি যদি র্যাঙ্কে না আসতে পারেন তাহলে একঝুড়ি ব্যাকলিঙ্ক দিয়ে লাভ টা কি? লাভ কিছু না হলেও রয়েছে উল্টো অনেক ক্ষতি যা আপরা পরবর্তী পয়েন্ট গুলিতে আলোচনা করবো। তাই এই ধরনের ক্ষতিকারক ব্যাকলিংক থেকে দূরে থাকুন। এগুলোর জন্য আপনি যদি ১০০ টাকাও খরচ করেন এতে করে আপনার লাভের লাভ কিছুই হবে না উলটো যেই ক্ষতির সম্মুখীন হবেন তা পোষাতে বেশ বড়সড় অঙ্কের টাকা লেগে যেতে পারে।
-
ব্যাকলিঙ্ক ইনডেক্স হবে না
আপনার ওয়েবসাইটকে রেফার করে যেই লিঙ্কটি করা হয় তাই হল আপনার সাইটের ব্যাকলিঙ্ক। এখন আপনি যদি চীপ এসইও সার্ভিস নিয়ে থাকেন তাহলে বেশীর ভাগ ব্যাকলিঙ্কই ইনডেক্স হবে না। দেখুন, গুগোলের কাছে ব্যাকলিঙ্ক হচ্ছে একটি ভোটের মত। একটি ব্যাকলিঙ্ক থাকা মানে হচ্ছে একটি ভোট তার রয়েছে।
কিন্তু, এই ভোট টি কাউন্ট হবার জন্য সেটা গুগলে ইনডেক্স হওয়া জরুরী। ইনডেক্স টা আবার কি? গুগলের ডাটাবেইসে কোন কিছু সেইভ হওয়া। এখন আপনার সাইটের জন্য যে সকল লিঙ্ক করা হচ্ছে তা যদি গুগলে ইনডেক্স ই না হয় তাহলে তো সেগুলো কোন ভোট হিসাবে কোন কাউন্টই হবে না।
তার মানে এই দারাচ্ছে, আপনি যদি এমন হাজার হাজার লিঙ্কও করিয়ে রাখেন, ইনডেক্স না হলে তা গুগলের কাছে আপনার সাইটের জন্য ভ্যালুলেস। ধরুন, আপনি নির্বাচনে দাড়িয়েছেন। আপনাকে এমন ৫০ জন ভোট দিল যারা কেউ ভোটারই না। আর, আপনার প্রতিদ্বন্দীকে এমন ৫ জন ভোট দিল যারা ভোটার। এখানে জয়ী কে হবে? ৫ টা বৈধ ভোট নিয়ে কিন্তু আপনার প্রতিদ্বন্দী জিতে যাবে। গুগলে ইনডেক্স না হওয়া লিঙ্ক আর অপ্রাপ্তবয়ষ্ক দের থেকে পাওয়া ভোট দুটোই ভ্যালুলেস।
আর কিছু ব্যাকলিঙ্ক যদি ইনডেক্স হয়েও যায়, তাহলে পড়বেন আবার অন্য বিপদে। এমনিতেই এই দিকে বিপদ, ইনডেক্স হলে আবার সেটা কি বিপদ?
-
সাইটের স্প্যাম স্কোর বেড়ে যাবে
ঐ কথায় আছে না সস্তার তিন অবস্থা। চীপ এসইও হচ্ছে তারই একটা বাস্তব চিত্র। চীপ এসইও এর যে সকল লিঙ্ক ইনডেক্স হবে সেগুলো আবার আপনার সাইটের স্প্যাম স্কোর বেড়ে যাবে। স্পাম স্কোর কি?
বিভিন্ন ধরনের স্প্যামিং সাইট থেকে লিঙ্ক আসার পার্সেন্টেইজ অনুযায়ী একটি স্কোর গননা করা হয়, সেটিই স্প্যাম স্কোর। এই স্কোর যত বেড়ে যাবে আপনার সাইটের জন্য সব দিক থেকেই ক্ষতি। র্যাঙ্ক হারানো থেকে শুরু করে গুগল থেকে ডি-ইনডেক্সও হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু লিঙ্ক গুলো এভাবে ক্ষতি করার কারন কি?
ধরুন, আপনি ঢাকাতে ওষুধের ব্যাবসায়ের সাথে জড়িত। কিন্তু আপনি সব যায়গায় আপনার বিজনেস প্রমোট করলেন মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের সাথে একসাথে ছবি তুলে। এতে করে আপনার ব্যবসায়ের জন্য কি ক্ষতি হবে নাকি ভালো? একে তো দাউদ ইব্রাহিমের সাথে ঔষুধের কোন সম্পর্ক নেই, তার উপর উনি আবার মাফিয়া। দেখবেন সিবিআই, সি আই ডি ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা আপনার পিছনে পড়ে যাবে। ব্যবসায়ের লাভের চিন্তা তো ভুলেই যাবেন, সার্ভাইভ করাই কষ্ট হয়ে যাবে। সেইম ব্যাপারটা চীপ এসইও এর ক্ষেত্রে ঘটে।
বিভিন্ন স্পামি সাইট থেকে বাল্ক লিঙ্ক আসার কারন গুগল আপনাকে সন্দেহ করে ফেলে । আপনার সাইট আছে ধরুন গ্রাফিক্স রিলেটেড, আর ব্যাকলিঙ্ক আসছে খাবার, রেস্ট্রুরেন্ট এই ধরনের সাইট থেকে। ব্যাপার টা কেমন হবে? যারা চীপ এসইও সার্ভিস দিয়ে থাকে তারা বাল্ক লিঙ্ক বিল্ডিং এর সময় এই ধরনের কাজই করে থাকে। আর ফলাফল কি আসে? গুগল তখন গোয়েন্দা সংস্থার মত আপনার সাইটকে হারিয়ে দিবে।
-
গুগল এর পেঙ্গুইন আপডেট অনুযায়ী পেনাল্টি খাবার সম্ভাবনা থাকে
২০১২ সালে গুগল এর এলগারিদমে এই পেঙ্গুইন আপডেট টি আসে। এই আপডেটে গুগল মুলত সার্চ রেজাল্ট থেকে অস্বাভাবিক লিঙ্ক সম্বলিত ওয়েবসাইট সড়িয়ে ফেলে। তাই এই ২০২০ সালে এসে অন্তত আপনি গুগল কে লিঙ্ক দিয়ে যদি বোকা বানাতে চান আপনার সাইটকেই গুগল বিনা নোটিশে কারাগারে পাঠিয়ে দিবে। আর একবার যদি পেনাল্টি খেয়ে যান, সেই সাইট পেনাল্টি থেকে ফিরিয়ে এনে আবার ভালো পজিশনে দাড় করাতে যে খরচ আপনাকে পোহাতে হবে আগের থেকেই কোয়ালিটি এসইও সার্ভিস করালে তার ৪ ভাগের ১ ভাগ খরচেই হয়ে যেত।
স্পামিং লিঙ্ক ডিস্যাভো করতে করতেই জীবন শেষ হয়ে যাবে। যারা চীপ এসইও সার্ভিস দিয়ে থাকে তারা তো কিছু ব্যাকলিঙ্ক করে দিয়েই টাকা নিয়ে চলে যাবে। এতে করে আপনার সাইটের র্যাঙ্ক হবে কিনা বা এর জন্য ভবিষ্যতে কোন ক্ষতি হবে কিনা এই ব্যাপারে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। তাই আপনি যদি ভেবে থাকেন অল্প কিছু টাকা দিয়ে এসব ভুলভাল এসইও সার্ভিস নিয়ে আপনার সাইটকে গুগলের টপ রেজাল্টে নিয়ে আসবেন নিতান্তই ভূলের মধ্যে রয়েছেন।
-
লং টার্ম স্ট্র্যাটেজি দিতে পারে না
চীপ এসইও সার্ভিস যারা দিয়ে থাকে তারা কেউ কখনই আপনাকে লং টার্ম ওয়ার্কিং স্ট্র্যাটেজি দিতে পারবে না। তারা শুধু আপনার থেকে টাকা নিবে এবং অল্প সময়ের মধ্যে অনেক গুলো ব্যাকলিঙ্ক করে দিবে যেগুলো কোন কাজেই আসবে না।
আচ্ছা এসইও সার্ভিস নিয়ে আপনি কি র্যাঙ্কিং চান নাকি ব্যাকলিঙ্ক চান? লং টাইম ওয়ার্কিং স্ট্র্যাটেজি তে আগাতে চান নাকি সল্প সময়ের মধ্যেই সাইটকে ক্ষতির মুখে ফেলতে চান? এত সব অসুবিধা থাকার পড়েও অনেক সময়ই আমরা এসব চিন্তা ভাবনা না করে চীপ এসইও সার্ভিস নিয়ে ফেলি। কেন আমরা এটি করি? টাকা কম লাগবে এর জন্য? কিন্তু আল্টিমেটলি কি আসলেই টাকা কম লাগে? আমি কিন্তু আপনাদের বলছি না যে মাসে হাজার হাজার ডলার খরচ করুন। বাজেটের একটা বিষয় তো থাকেই। বাজেটের মধ্যেই চেষ্টা করুন কোয়ালিটি এসইও সার্ভিস প্রভাইডার খুজে বের করুন। কারো থেকে সার্ভিস নেওয়ার আগে পোর্টফোলিও দেখুন। লং টার্ম স্ট্র্যাটেজি কাজ করবে কিনা জেনে নিন। নাহলে যে অচিরেই আপনার সাইট গুগল থেকে হারিয়ে যাবে।
শেষকথা
এভাবে বলতে থাকলে আরও অনেক সমস্যার কথাই বলা যাবে যে কেন চীপ এসইও হার্ট করে। কিন্তু তার মধ্যে মেইন ব্যাপার গুলি আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম যেন আপনারা এই ধরনের ভূল না করে থাকেন। আশা করি, এর ক্ষতিকর বিষয় গুলো সবাই বুঝতে পেরেছেন। পরিশেষে একটি কথা বলতে চাই, প্রয়োজনে কোন এসইও ই করবেন না সাইটে তাও দয়া করে চীপ এসইও সার্ভিস নিয়ে সাইটের ক্ষতি করবেন না। আর একটি কথা শুধু যে বেশী দাম দিয়ে এসইও সার্ভিস নিলেই সেটি ভালো হবে তাও কিন্তু নয়।
তাহলে কিভাবে এসইও সার্ভিসের মান যাচাই করা যায়?? চাইলে এখান থেকে জেনে নিতে পারেন।
এই ধরনের আরও দরকারী সব আর্টিকেল পেতে ক্রিয়েটিভ মার্কেটার্স বাংলাদেশ এর সাথেই থাকুন। এসইও সার্ভিস এর ব্যাপারে কোন প্রশ্ন থাকলে বা সার্ভিস নিতে আগ্রহী হলে এখনই যোগাযোগ করুন। আপনার ব্যবসায়ের জন্য রইলো শুভকামনা। ধন্যবাদ সকলকে।